প্রিয় পাঠক বর্তমান সময়ে আমরা ইন্টারনেটের সাথে এতটাই সম্পৃক্ত যে আমাদের সর্বক্ষেত্রেই ইন্টারনেট আমাদের সাথে সম্পৃক্ত এ কারণেই আমরা দিন দিন ইন্টারনেটের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে উঠছি যেহেতু আমরা বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ কারণে ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখাও আমাদের দায়িত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বলা যেতে পারে এ কারণেই আজ আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করব, সর্বপ্রথম আমাদের যে জিনিসটি জানার দরকার সেটি হল বর্তমান সময়ে আমরা যে ডিভাইসগুলি একজন আই এস পি ইউজার হিসেবে ব্যবহার করে থাকি সেগুলো হলো,
১. টিজে বক্স ২. ফাইবারপ্যাচ কট ৩.ক্যাট সিক্স প্যাচ কট ৪. অনু ৫. রাউটার এ সকল সরঞ্জামগুলো একজন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের বাসায় ইন্সটল করা হয়ে থাকে যেত আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশে কেন নিষিদ্ধ হচ্ছে সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার এ কারণে রাউটারের বিষয়টা নিয়ে আজকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশে বর্তমানে কত ধরনের ওয়াইফাই রাউটার পাওয়া যায়
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ডের ওয়াইফাই রাউটার বাজারজাত করা হয়ে থাকে এরমধ্যে সর্বপ্রথম এবং সর্বনিম্নমানের যে রাউটারটি পাওয়া যায় সেটি হল এন ওয়াইফাই ফোর স্ট্যান্ডার এর রাউটার বা ২.৪ গিগাহার্জ অথবা আমরা কেউ কেউ এটাকে সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার বলে থাকি। এরপর বাংলাদেশের মার্কেটে দ্বিতীয়তঃ যে রাউটারটি পাওয়া যায় সেটি হল ওয়াইফাই ফাইভ বা এসি সিরিজ এর রাউটার গুলো। তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের মার্কেটে বর্তমান যে রাউটারগুলি পাওয়া যায় তার মধ্যে আরেকটি হল ওয়াইফাই সিক্স বা এ এক্স সিরিজ এর রাউটারগুলো। চতুর্থতম বাংলাদেশের বাজারে যে রাউটার গুলি পাওয়া যায় এর মধ্যে আরেকটি হলো ওয়াইফাই সেভেন বা be সিরিজ এর রাউটার গুলো যদিও ওয়াইফাই সেভেন এই রাউটার গুলো এখন অল্প কিছু সংখ্যক বাংলাদেশের মার্কেটে এভেলেবেল রয়েছে বা বলতে পারি মার্কেট আপকামিং চলতেছে। এ সকল সিরিজ এ রাউটার গুলোর মধ্যে সর্বাধিক সেল হয় বাংলাদেশের মার্কেটে সর্বনিম্নমানের যে রাউটারটি অর্থাৎ ওয়াইফাই 4 বা n সিরিজ এর রাউটার গুলি, এর একটি বড় কারণ হলো এটি সকলের বাজেটের মধ্যে হয়ে থাকে অর্থাৎ খুব কম দামেই মার্কেট থেকে একটি রাউটার যে কেউ ক্রয় করতে পারে সকলের জানার জন্য বলে রাখি এই রাউটারগুলো শুধুমাত্র একটি ফ্রিকোয়েন্সি অর্থাৎ ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি সরবরাহ করতে পারে।
বিটিআরসি কেন বাংলাদেশে সিঙ্গেল ব্র্যান্ড রাউটার নিষিদ্ধ করল..?
বাংলাদেশের সকল জনগণ এটা অবশ্যই জেনেছে যে আমাদের গভমেন্ট অর্থাৎ বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবা এর মান উন্নয়নের জন্য সিঙ্গেল ব্যান্ড এর রাউটার আগামী ১লা এপ্রিল, ২০২৫ তারিখ থেকে সকল এন সিরিজ এর রাউটার অর্থাৎ সিঙ্গেল ব্যান্ড এর সকল রাউটার গুলি ক্রয় বিক্রয় এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করেছে অর্থাৎ যে সকল রাউটার গুলো শুধুমাত্র একটি ফ্রিকুয়েন্সি সরবরাহ করতে পারে সেই রাউটার গুলি আগামী ১লা এপ্রিল, ২০২৫ তারিখ থেকে আর বাজারজাতকরণ করা যাবে না ডুয়েল ব্যান্ড এর রাউটার অর্থাৎ দুইটি ফ্রিকোয়েন্সি যে সকল রাউটার গুলি সরবরাহ করতে পারে, টু পয়েন্ট ফোর গিগাহার্জ এবং ফাইভ গিগাহার্জ দুইটি ফ্রিকোয়েন্সি যে সকল রাউটার কলি একসঙ্গে সরবরাহ করতে পারে সেগুলোই শুধুমাত্র বাজারজাত করা যাবে। সোজা কথাই বলতে গেলে একের অধিক ফ্রিকুয়েন্সি শো করতে পারে এবং ২.৪ গিগাহার্জ এর থেকে উন্নত যে সকল রাউটার গুলি রয়েছে সেগুলোই ক্রয় বিক্রয় এবং বাজারজাত করতে হবে। কিন্তু কেন বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নিল তার বেশ কিছু কারণ আমি আজ তুলে ধরার চেষ্টা করব।
১. সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার গুলি বাজারজাতকরণ বন্ধ করার কারণ হিসেবে বিটিআরসি তাদের যে যুক্তি তুলে ধরেছে সেটি হল এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে বিদেশ থেকে নিম্নমানের রাউটার আমদানি এবং বাংলাদেশে উৎপন্ন কৃত নিম্নমানের রাউটার গুলি মার্কেট চুতো হবে এর ফলে ইন্টারনেটের মান উন্নয়ন হবে।
২. দ্বিতীয় কারণটি হল বর্তমানে আমরা যে মোবাইল ফোন এবং ডিজিটাল ডিভাইস গুলো ইউজ করতেছি সেগুলো যেই ডাটা ট্রান্সফার এর চাহিদা রাখে সেটা কোনভাবেই একটি সিঙ্গেল ম্যান এর রাউটার থেকে কাম্য নয় আজকাল আমরা মার্কেট থেকে যদি একটি ফোন ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রাইসের এনজিও ক্রয় করতে যায় তাহলেও সেটির জন্য একটি সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার ভালো মানের ডাটা ট্রান্সফার সক্ষমতা রাখেনা।
৩. এরপর আরেকটি কারণ হলো সিঙ্গেল ব্র্যান্ড এর রাউটারগুলো একদমই outdated device আরেকটি বিষয় আমরা রিসার্চ করলে হয়তো জানতে পারবো বিশ্বের কোন দেশে বাংলাদেশের তুলনায় সিঙ্গেল ব্যান্ডের রাউটার গুলি ইউজ হয় না যে কারণে আমরা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সকল দেশের থেকে অবশ্যই কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি।
৪. এরপর যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো সেটি হল ২.৪ গিগাহার্জ এর রাউটারের সিগন্যাল গুলি ফাইভ গিগাহার্জ রাউটার এর তুলনায় কিছুটা এরিয়া অনুযায়ী কম সিগন্যাল দিলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিন্তু বেশ খানিকটা তফাৎ রয়েছে আমরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো ২.৪ গিগাহার্ট এ রাউটার গুলি একটুও দূরে গেলে দেখা যাচ্ছে ৫ গিগাহার্জ রাউটারের থেকে কিছুটা সিগন্যাল বেশি দেখায় কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে ২.৪ গিগাহার্জ এর রাউটার গুলি সিগন্যাল বেশি থেকেও যতটুকু ইন্টারনেট স্পিড দিতে পারে এর থেকে ফাইভ গিগাহার্জ রাউটার এর সিগন্যাল গুলি সিগনালে কিছুটা কম থাকলেও ইন্টারনেট স্পিড কিন্তু অন্য রাউটারের থেকেও এটি কিছুটা বেশি দিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করলে অবশ্যই আমাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝতে পারব।
৫. এরপর আরেকটি বিষয় না বললেই নয় সেটি হল আমরা সিঙ্গেল ব্যান্ড এ রাউটার গুলি পরিত্যাগ করলেও ডুয়েল ব্যান্ড এর রাউটারের মধ্যে ডিফল্ট অবস্থাতেই সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারের একটি ফ্রিকোয়েন্সি অর্থাৎ ২.৪ কিগাহার্জ এর সুবিধা পেতেই থাকবো এটা কেমন জানি এক এর মধ্যে দুই।
৬. এরপর যে বিষয়টি রয়েছে সেটি হলো interference আমরা অনেকেই মনে করতে পারি এই ইন্টারফেরেন্স আবার কাকে বলে..? আমরা যারা রাউটার সম্বন্ধে কিছুটা বেশি জ্ঞান রাখি তারা অবশ্যই জানবো রাউটারে চ্যানেল থাকে অর্থাৎ চ্যানেল হিসেবে আমাদের সিগন্যালের ওঠানামা কমবেশি এর বিস্তর পার্থক্য হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ২.৪ এর যে সকল চ্যানেল গুলো রয়েছে সেগুলোর সকল গুলোই হচ্ছে ওভারল্যাপিং চ্যানেল অর্থাৎ চ্যানেল উইথ এর কারণে আপনার যে ফ্রিকোয়েন্সি সেটি আপনার বাসার বিভিন্ন দেওয়াল ফার্নিচার ও আসবাবপত্রের কারণে সিগন্যাল এর বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এছাড়াও আপনার আশেপাশের ওয়াইফাই রাউটার এর চ্যানেলগুলিও আপনার সাথে সংঘর্ষ পূর্ণ হওয়ার কারণে স্মুতলি ইন্টারনেট ইউজ করতে আপনি বাধাগ্রস্ত হবেন এ কারণে এ সকল রাউটার গুলি পরিত্যাগ করা আমাদের জন্য উপকারী হবে বলে মনে করছি।
৭. আরেকটি বিষয় হলো আমরা যারা এখন ওয়াইফাই ব্যবহার করতেছি সকালে কিন্তু ওয়াইফাই সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখি না যার কারণে আমাদের আইএসপি গনকে এ সকল বিষয়গুলো এমনকি আমার বাসার রাউটার এবং অণুগুলো তাদের দ্বারা আনিয়ে নেই সেক্ষেত্রে তারা বেশিরভাগই যে কাজটা করে থাকে সেটি হল ইউজারের cost কমানোর জন্য একটি নিম্নমানের রাউটার সাজেস্ট করে বা কিনে দেয় কারণ বর্তমান আমাদের মেন্টালিটি এমন যে কমে হলে বেশি থেকে কেন যাব এর কারণে আমাদের আইএসপি গন মনে করে যে কাস্টমারের কষ্ট বেশি দেখালে কাস্টমার হাতছাড়া হয়ে যাবে সে কারণে তারা একটি যেনতেন রাউটার আপনাকে আমাকে সাজেস্ট করে, আর এই কারণেই ইন্টারনেট এর অগ্রগতি এর পথে আমরা আরো কিছুটা পিছপা হয়ে যায়।
৮. নম্বর এবং সর্বশেষ যে বিষয়টি বলার চেষ্টা করব সেটি হল আমাদের দেশকে (বাংলাদেশে সিঙ্গেল ব্যান্ড এর রাউটার নিষিদ্ধ) এই সিদ্ধান্তে এর মাধ্যমে ই-বর্জ্যের হাত থেকে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর প্রকৃতিকে বাঁচাবে কারণ মানুষ বর্তমানে কিছুটা হলেও বুঝতে শিখেছে এবং সিঙ্গেল ব্যাংকের রাউটার গুলি পরিত্যক্ত করতেছে যে কারণে ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে আর এটি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যদি কোন পদক্ষেপ আমরা এখন না গ্রহণ করি তাহলে ভবিষ্যতে এগুলো আমদানি হতে থাকলে সকলে যখন এটি পরিত্যাগ করবে তখন একটি বিশাল আকারের কি বর্জ্য ক্রিয়েট হবে তাই এখন থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করা আমাদের জন্য উচিত বলে আমি মনে করি।
আর এই সকল বিষয়গুলি লক্ষ্য রেখে আমরা যদি এগুলো মেনে আমাদের নিজেদের স্বার্থে এবং আমাদের দেশের স্বার্থে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে আমাদের দেশ এর অগ্রগতি এবং আমাদের দেশের ইন্টারনেট এর গতিসীমা অবশ্যই লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।