আমরা সকলেই জানি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তুলনা করতে গেলে ইন্টারনেট স্পিডের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বেশ অনেকটাই পিছিয়ে এমনকি ২০২২ সালের একটি জরিপে দেখা গিয়েছে উগান্ডা এর ইন্টারনেট স্পিড এর থেকেও বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্পিড নিম্নমানের এ সকল বিষয়কে মাথায় রেখে বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্যান্য বিষয়দের সাথে ইন্টারনেট স্পিড নিয়েও কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন BTRC তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এটি ঘোষণা করে যে আগামী ১লা এপ্রিল ২০২৫ হতে বাংলাদেশ সকল ব্র্যান্ডের সিঙ্গেল ব্র্যান্ড রাউটার ক্রয় বিক্রয় ও আমদানি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এর পরিবর্তে সকলকে ডুয়েল ব্র্যান্ডের রাউটার ব্যবহার করার জন্য এবং ক্রয় বিক্রয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল শুধুমাত্র সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার পরিত্যাগ করার মাধ্যমে কি ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো সম্ভব….?
সোজা ভাষায় বলতে গেলে শুধুমাত্র রাউটার পরিবর্তনের মাধ্যমেই ইন্টারনেট স্পিড এর উন্নতি সাধন করা সম্ভব নয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ রাউটার সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটি শুকরিয়া দাবিদার, কিন্তু এই বিষয়টার সাথে আরো কিছু বিষয় এমন রয়েছে যেগুলোর দিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার বলে আমরা মনে করি এবং আশা করব ভবিষ্যতে যে সরকারই দেশ পরিচালনা করুক না কেন এ সকল বিষয়গুলো গুরুত্বের সহকারে আমলে নিবেন। অবশ্যই ২.৪ গিগাহার্জ রাউটার পরিত্যাগ করলেই স্পিড বেড়ে যাবে এমনটা নয় অবশ্যই এই বিষয়টি তো মাথায় রাখতেই হবে কিন্তু এর সাথেও আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে যেগুলোর বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান হতে সে বিষয়গুলো আমার পাঠকদের তুলে ধরার চেষ্টা করব।
১. প্রথমত যে বিষয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করি সেটি হল অবশ্যই আমরা এখন থেকে সিঙ্গেল ব্র্যান্ডের রাউটারের পরিবর্তে ডুয়েল ব্যান্ডের রাউটার ব্যবহার করার চেষ্টা করব কিন্তু এ বিষয়টিও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে শুধুমাত্র ডুয়েল ব্যান্ড রাউটার বলেই মার্কেট থেকে যেকোনো একটি রাউটার ক্রয় করে নিয়ে এসে আমি আমার ইন্টারনেট স্প্রিডের বিশাল একটি তফাৎ লক্ষ্য করব এমনটি নয় কারণ কিছু রাউটার এমনও রয়েছে যেগুলি নামে ডুয়েল ব্যান্ডের হলেও কার্যকারী ক্ষমতা সেই সিঙ্গেল ব্যান্ড এর রাউটারের মতই সে কারণে অবশ্যই একটি ভালো রাউটার ক্রয় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে এ বিষয়ে জ্ঞান নিব এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি ভালো রাউটার ক্রয় করার চেষ্টা করব কেননা একটি রাউটার আপনার ইন্টারনেট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কে এক অন্যরকম অনুভুতি দান করবে।
২. এরপরে যে বিষয়টি আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত সেটি হল অবশ্যই আমরা যে কোন ব্রুয়েল ব্র্যান্ডের রাউটার ক্রয় করব না ঠিকই কিন্তু তাহলে কোন ডুয়েল ব্যান্ডের রাউটার গুলো আমরা আমাদের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কে বেটার করতে পারে..? এক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করব এটলিস্ট AC1200 স্ট্যান্ডার্ড এর যে ডুয়েল ব্যান্ড এর রাউটার আছে সেগুলো থেকে ব্যবহার স্টার্ট করার ট্রাই করতে হবে।
৩. এরপর আরেকটি বিষয় যেটি তুলে ধরার দরকার বলে মনে করি সেটা হল এক দেশ এক রেট হিসেবে বিডিআরসির যেই ব্রডব্যান্ড প্যাকেজ রয়েছে এর মধ্যে ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএস এই জাতীয় যে প্যাকেজগুলো আমরা এখন ব্যবহার করে থাকি এখানে কিছুটা পরিবর্তন করে কিছু এমবিপিএস বাড়িয়ে দিলে ইউজার এক্সপেরিয়েন্সটা আরো কিছুটা বেটার হবে বলে মনে করছি।
৪. এ পর্যায়ে একটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি সেটি হল আমরা যারা সিঙ্গেল ব্যান্ড এর রাউটার গুলো ক্রয় করতাম তাদের কারো কারো সমস্যাটা এমন ছিল যে আমরা অতিরিক্ত দাম দিয়ে রাউটার কিনার সক্ষমতা রাখি না এবং কারো এটা সমস্যা ছিল যে খুবই অল্প সংখ্যক লোক সেটি ব্যবহার করবে বা কম ইউজার ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে একটি রাউটার কেন ক্রয় করব। আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ বিষয়টিও একটু ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছি কারণ সত্যিই সকলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম দিয়ে একটি রাউটার ক্রয় করার সামর্থ্য থাকে না তাই তাদের বিষয়ে বিকল্প কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, যাতে করে তারাও একটি ভালো ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে পারে।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে ইন্টারনেট স্পিড এর মান বৃদ্ধি করতে গেলে সে ক্ষেত্রে এখনো কিছু জায়গায় দেখা যায় এফ টি টি সি এর সংযোগ ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে সর্বত্র এফটিটি এইচ এর সংযোগ বাধ্যতামূলক করলে ইন্টারনেট স্পিড এর মান অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও একটি এফ টি টি এইচ সংযোগের ক্ষেত্রে যে সকল ডিভাইস গুলো ব্যবহার হয়ে থাকে ওয়েলটি, ফাইবার, অনু এর সবগুলোকে আমাদের লক্ষ্য রেখে স্বল্পমূল্যে ভালো প্রোডাক্ট চুজ করতে হবে এক্ষেত্রে অনুর বিষয়টা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেননা বাংলাদেশে বর্তমানে অধিক পরিমাণে রেফারভিস কোন বাজারজাত করা হয়। অবশ্যই একটি ভালো সংযোগের ক্ষেত্রে একটি ভালো অনু ও থাকা জরুরী অন্যথায় কখনোই বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্পিড এর মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না।