ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে উঠেছে বর্তমানে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই আমাদের ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বাসা, অফিস, এবং বিভিন্ন বিনোদন প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা এখন ইন্টারনেটের উপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে গেছি যার কারণে এখন আমাদের একটি ভালো মানের ইন্টারনেট সকলেরই প্রয়োজন হয়ে থাকে কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা একটি ভালো মানের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অর্থাৎ (আইএসপি) যাচাই করতে পারিনা যার কারণ বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদেরকে এ কারণেই কিছু সহজ বিষয় আজকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি যাতে করে আমরা যারা এই বিষয়ে একটু কম জানি তারাও যেন একটি ভালো মানের সার্ভিস যাচাই করতে পারি এবং আমাদের ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয় তাকে সম্পূর্ণভাবে আনন্দের সাথে উপভোগ করতে পারি। একটি ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যেমন: ১.সংযোগের ধরন ২. ইন্টারনেটের স্পিড বা গতি ৩. সংযোগের নির্ভরযোগ্যতা এবং খরচ এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার ধরন ও ইউজার হিসেবে ইন্টারনেট যাচাই-বাছাই করা উচিত।
১. সংযোগের ধরন! একটি ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ অবশ্যই অপটিক্যাল ফাইবার হওয়া জরুরী অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইন্টারনেটের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তবে সাধারণত অপটিক্যাল ফাইবার এর সংযোগ গুলি অত্যন্ত স্মুথ ও ২৪ আওয়ারস এর হয়ে থাকে। কেননা অপটিক্যাল ফাইবার এর সংযোগ গুলি সরাসরি আলোক সিগনাল দ্বারা ইন্টারনেট সরবরাহ করে যার দরুন অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক সমস্যার থেকেই বেঁচে থাকা যায় এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন আই এস পি ইন্ড থেকে বাসা পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় কারেন্ট না থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ এসটেবল থাকে এটা ফাইবার অপটিক কেবল না হয়ে যদি cat6 অর্থাৎ এফ টিটি সি কানেকশন হত তাহলে আই এস পি এন্ড থেকে আপনার বাসা পর্যন্ত যে কোন জায়গায় বিদ্যুতের সমস্যা হওয়ার কারণে আপনার বাসায় ও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এদিক দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার একটি স্টেবল কানেকশন নিশ্চিত করে।
২. ইন্টারনেটের স্পিড বা গতি! একটু ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ হতে হলে ইন্টারনেটের স্পিড বা গতি অবশ্যই ভালো মানের হতে হবে ইন্টারনেট স্পিডকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি একটি আপলোড স্পিড এবং আরেকটি ডাউনলোড স্পিড আপলোড স্পিড বলতে আপনার কম্পিউটার বা ডিভাইস হতে ইন্টারনেটে ডাটা ট্রান্সফার হওয়ার হারকে বোঝায়, এবং আপলোড স্পিড হচ্ছে একক সময়ে আপনার কম্পিউটার বা ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেটে হতে যেই ডাটা গ্রহণ করা হয় তাকে বোঝায়। এ বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে ধরুন আপনি একটি টেন এমবিপিএস এর একটি সংযোগ আপনার আইএসপি এর নিকট হতে নিয়েছেন। সোজা বাংলায় বলতে গেলে এর অর্থ হল প্রতি সেকেন্ডে টেন মেগাবিটস ডাটা অথবা আপনি যদি এটাকে মেগা বাইটে কনভার্ট করেন তাহলে, ডাউনলোড ম্যানেজার অনুযায়ী সেটা 1.2Mega Byte’s per second এই পরিমাণ হবে অর্থাৎ সোজা বাংলায় বললে আপনার পিসিতে বা মোবাইলে এই পরিমাণ স্পিডে ডাউনলোড হবে। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় এই জিনিসটা কমে যায় যার কারণে আমরা ইন্টারনেট স্কলিং এর ক্ষেত্রে বাফারিং লক্ষ্য করি যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার কাঙ্খিত সংযোগে কিছুটা ফল্ট রয়েছে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় যে ডাউনলোড স্পিড ঠিক রয়েছে কিন্তু আপলোড স্পিড ঠিক নেই সেক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। একটি ভালো ইন্টারনেট সংযোগ বলতে স্পিডের ক্ষেত্রে আপলোড স্পিড ও ডাউনলোড স্পিড দুটোই ঠিক থাকা জরুরী।
এছাড়াও আরেকটি বিষয় যেটি স্পিডের সাথেই সম্পৃক্ত সেটা হল লিটেন্সি এর পরিমাণ, যে নেটওয়ার্কে লিটেন্সি এর পরিমাণ যতটা কম হবে সেই নেটওয়ার্ক ততটাই ভালো বলে বিবেচিত হবে। এবং এটাকে আমরা কেউ কেউ পিং (Ping) বলেও সম্বোধন করি।
লিটেন্সি এর কারনে আমরা সাধারণত যেসব সমস্যায় এর সম্মুখীন হয় তা হচ্ছে, গেমের মধ্যে লেগিং, হাইপিং, ভিডিও কলে ছবি আটকে যাওয়া, ভিডিও অথবা অডিও মিস ম্যাচ হওয়া ইত্যাদি প্রবলেম আমরা হাই লেকেন্সি এর কারণে ফেস করে থাকি।
৩. সংযোগের নির্ভরযোগ্যতা এবং খরচ। একটি ভালো ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে সংযোগের নির্ভরযোগ্যতা অত্যন্ত জরুরী আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন অনেক আইএসপি আছে তাদের সার্ভিস মোটামুটি ভালো তবে কখনো সংযোগ ব্রেক হলে সেটা বেশ কিছু সময় পর কানেকশন স্টেবল হয় অনেক আইস্পিত এমনও আছে যারা দু চার দিন সময় নিয়ে এরপরে একজন গ্রাহকের সংযোগ স্টেবল করে সে ক্ষেত্রে তারা যতটাই স্পিড দিক না কেন বা যত ভালো সার্ভিসই দিক না কেন অবশ্যই কেউ চাইবে না যে তার সংযোগটি একবার ব্রেক হলে ৩-৪ দিন বা বেশ খানিকটা সময় পরে সংযোগ প্রাপ্ত হবে। এজন্য এ বিষয়টিও যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি একটি ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে। এরপর যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যেতে পারে সেটি হল প্রাইজ বা খরচের ক্ষেত্রে কম বেশি এর বিষয়টি অনেক আই এস পি আছে তার কম্পারিটর আইএসপিদের মত সেবা দিলেও বিভিন্ন হিডেন চার্জ এবং প্যাকেজ চার্জ অধিক করে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের থেকে সংযোগ নিয়ে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে পারে এজন্য অবশ্যই সংযোগ গ্রহণের পূর্বে উক্ত আই এস পি এর সকল প্যাকেজ এবং লেনদেন এর বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ভালো ইন্টারনেট সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় যেমন ভালো মানের রাউটার এবং ও এন ইউ ব্যবহার করা কেননা একটি ভালো মানের সংযোগ অবশ্যই একটি ভাল মানের রাউটার এবং ও এন ইউ ডিজার্ভ করে কেননা যতই ভালো সার্ভিস হোক না কেন ভালো রাউটার ছাড়া কখনোই আপনি ভাল সার্ভিস পাবেন না বেশিরভাগ সময়েই গ্রাহকেরা এই ভুলটা করে থাকে যে অনেক খরচ খরচা করে একটি ইন্টারনেট সংযোগ নেই এবং মাসের পর মাস একটি ভালো এমাউন্টের বিল ও পেমেন্ট করে কিন্তু একটি নিম্নমানের রাউটার এবং ও এন ইউ ব্যবহার করে যার কারণে ইন্টারনেট স্পিড তার যতটুকু পাওয়ার কথা সে ততটুকু পায় না এ কারণে এ বিষয়টির দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরী।
এছাড়াও আমরা অনেকেই আরেকটি ভুল করে থাকি সেটা হলো আমরা আমাদের ডিভাইসের চাহিদা অনুযায়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ গ্রহণ করি না যার কারণে আমার চাহিদা বিশ এমবিপিএস হওয়ার পরেও যখন আমি ৫ এমবিপিএস এর সংযোগ নিয়ে থাকি তখন এটা স্বাভাবিক যে আমি আমার চাহিদা অনুযায়ী ইন্টারনেট স্পিড পাবনা অনেকেই মনে করেন যে ইন্টারনেট সংযোগ একটি নিলেই হয় তবে বিষয়টি এমন না আপনার চাহিদা অনুযায়ী অবশ্যই আপনাকে প্যাকেজ নিতে হবে সেক্ষেত্রে আপনি নিজে এ বিষয়টি বুঝতে না পারলে আপনার পরিচিত এ বিষয়ে জানে এমন ব্যক্তির সাথে আলোচনা করুন অথবা আপনার নিকটস্থ আইএসপি এর সাথে আলোচনা করুন এবং আপনার ডিভাইস এর পরিমাণ এবং আপনার ব্যবহারের পরিধি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে এরপর একটি ইন্টারনেট প্যাকেজ পারচেজ করুন তাহলে অবশ্যই ভালো ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। আশা করি এই পোস্টটি থেকে উপকৃত হবেন।