ক্যামেরা আবিষ্কারের ইতিহাস

ইতিহাস

আমাদের বিশেষ মুহূর্তগুলোকে স্মৃতির পাতায় সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ক্যামেরার বিকল্প আর কিছু হতে পারে না ক্যামেরা এমন একটি আবিষ্কার এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কোন বস্তুকে চিত্র আকারে সংরক্ষিত করে রাখা যায়। ক্যামেরা আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ লেখার মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন তথ্য ও বিশেষ মুহূর্তগুলোকে সংরক্ষিত করে রাখতো। আজ আমরা যে ক্যামেরা আবিষ্কার করছি তা হঠাৎ করে আবিষ্কৃত নয় বরং এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর অনেক বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম ও গবেষণার পরেই আমাদের আজকের এই ক্যামেরা আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। আজ থেকে ২০০ বছর আগেও একটি ছবি তুলতে আমাদেরকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হতো যদিও বর্তমানে ছবি তোলা অতি সাধারণ একটি বিষয় হয়ে গেছে। বর্তমানে স্মার্টফোন আসার পরে আমরা চাইলেই আমাদের পছন্দের কোন মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করে ফেলতে পারছি তবে ক্যামেরার ধারণাটি কিভাবে মানুষের মস্তিষ্কে এসেছিল তা জানতে হলে আমাদের অন্তত এক হাজার বছর আগের ইতিহাস সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। পৃথিবীর প্রথম যে ক্যামেরাটি আবিষ্কার হয়েছিল তা দিয়ে একটি ছবি তুলতে প্রায় আট ঘন্টা সময় লাগতো ক্যামেরা আবিষ্কারের পূর্বে পেইন্টিং এর প্রচলন ছিল।

তখনকার মানুষ প্রিন্টিংকেই অনেক গুরুত্ব দিতেন এবং সেটার মাধ্যমেই নিজেদের পছন্দের মুহূর্ত বা ব্যক্তিকে অঙ্কন করে রাখতেন। যদিও এই পেইন্টিং এর বিষয়টি খুব একটি সহজ ছিল না কারণ এই পেইন্টিং করার জন্য একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘ আট ঘন্টা সময় পোজ দিতে হতো এবং একজন ব্যক্তি তার ছবি আঁকত। নিঃসন্দেহে ক্যামেরার আবিষ্কার মানুষের জীবনকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। অবশ্যই পৃথিবীতে কোন জিনিসের আবিষ্কার একদিনের হয়নি। প্রত্যেকটি বস্তু আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কোন একটি বস্তু আবিষ্কারের জন্য অনেক বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম নিহিত রয়েছে। ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে একজন ইরাকি বিজ্ঞানী যার নাম ছিল আলহাজ্বের তিনি একটি নতুন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং যার নাম দিয়েছিলেন ক্যামেরা অবস্কিউরা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আলহাজের দেখেন যদি একটি অন্ধকার ঘরের দেয়ালে একটি ছিদ্র করা হয় তাহলে সেই ছিদ্র দিয়ে সেই ঘরের অন্য পার্সের দেয়ালে বাইরের কোন জিনিসের ছবি এসে পৌঁছে। তখন তিনি এই রুম ঘরের নাম রাখেন ক্যামেরা অবস্কিউরা যার বাংলা অর্থ হচ্ছে অন্ধকার ঘর। বলা হয়ে থাকে এই ক্যামেরা অবস্কিউরা এর এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই বর্তমান ক্যামেরা তৈরি হয়েছে। এরপর ১৪৫২ সালে মহান বিজ্ঞানী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এই ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করে পেন্টিং করেন এরপর থেকে ক্যামেরা অবস্কিউরা পেন্টিং এর কাজে ব্যবহার হয়।

সেই সময় ক্যামেরা অবস্কিউরা দিয়ে যে ব্যক্তি বা বস্তুর পেন্টিং করা হতো তা অত্যন্ত নিখুঁত হতো তবে ক্যামেরা অবস্কিউরাতে একটু সমস্যা ছিল এর কারণ হলো ক্যামেরা অবস্কিউরাতে যে ছবি তৈরি হতো তা উল্টো ছিল এরপর কিছু পেনটার ক্যামেরা অবস্কিউরাতে আয়না সদৃশ্য কাঁচের ব্যবহার করেন যার মাধ্যমে ছবিটিকে সোজা করা সম্ভব হয়। এরপর ১৮২৬ সালে জোসেফ নাইস্ফর নিপ্সি দেখেন সিলভার ক্লোরাইড এর ওপর যখন আলো পড়ে তখন তা ধীরে ধীরে কালো হতে শুরু করে এরপর জোসেফ নাইস্ফর ক্যামেরা অবস্কিউরা এর আকার ছোট করে একটি বাক্সের আকারে নিয়ে আসেন এরপর তিনি এই যন্ত্রটির নাম রাখেন বিনহল ক্যামেরা এরপর তিনি কাগজের একটি টুকরোতে সিলভার ক্লোরাইড লাগিয়ে একটি বিলহোল ক্যামেরা এর মধ্যে প্রবেশ করান এরপর বেশ কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে তিনি যখন সেই কাগজটি বিনহল ক্যামেরা এর মধ্য থেকে বাইরে বের করেন এরপর তার কাছে বাইরের দৃশ্যের মত একটি সাদা কালো ছবি সদৃশ্য কিছু দৃশ্যমান হয়। এই ভাবেই জোসেফ নাইস্ফর একটি অটোমেটিক ক্যামেরা আবিষ্কার করে ফেলেন। যেই ক্যামেরাতে ছবি কোন প্রিন্টারের পরিবর্তে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা যেত এই কারণেই জোসেফ নাইস্ফর নিপ্সিকে ফটোগ্রাফির জনক বলা হয়। তবে জোসেফ নাইস্ফর নিপ্সি এর ক্যামেরায় দুইটি সমস্যা তখনো থেকেই যায় যার প্রথমটি হল এই ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি ছবি তুলতে প্রায় আট ঘন্টা সময় লাগতো অর্থাৎ কেউ যদি এই ক্যামেরায় একটি ছবি তুলতে চাই তাহলে তাকে একভাবে টানা ৮ ঘণ্টা এই ক্যামেরার সামনে বসে থাকতে হতো, এবং দ্বিতীয় যে সমস্যাটি ছিল সেটি হল এই ক্যামেরা থেকে তোলা ছবি খুব কম সময়ের মধ্যেই অস্পষ্ট হয়ে যেত যার কারণ হলো ছবিটি বাইরে বের করলে সিলার ক্লোরাইড আলোর সাথে বিক্রিয়া করত তখন এই সমস্যা দূর করার জন্য জোসেফ নাইস্ফর এবং তার সহযোগী বিজ্ঞানী লুইস দুজনে মিলে একটি উপায় বের করেন সেটি হল তারা এরপর থেকে কাগজে সিলভার ক্লোরাইড এর পরিবর্তে বিটুমিন নামক একটি পদার্থের ব্যবহার শুরু করেন যার কারণে ছবি অস্পষ্ট হওয়ার সমস্যাটা দূর হয়ে গেলেও একটি সমস্যা তখনও থেকেই যায় সেটি হল দীর্ঘক্ষণ সময় লাগা।

এই কারণেই আগেকার সময়ের ছবির ব্যক্তিদের হাসির চিত্র খুব একটি দেখা যেত না কারণ দীর্ঘ আট ঘন্টা তাকে সেভাবেই থাকতে হতো এমনকি এই ছবি উঠানোর জন্য তারা নড়াচড়াও করতে পারত না। এরপর তখন ঐ দুইজন বিজ্ঞানী বিটুমিন এর পরিবর্তে বারুদ এর ব্যবহার শুরু করেন এরপর সে সময় ৮ ঘন্টা থেকে কমে ৩০ মিনিট এ এসে পৌঁছে এরপর থেকে বিনহল ক্যামেরা বিক্রি শুরু হয়ে যায় যার ফলে তখন একজন সাধারন মানুষ চাইলেই ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠাতে পারতো। ১৮৮৮ সালে নিউইয়র্কের একজন বিজনেসম্যান জর্জ ইস্টম্যান একটি ড্রাই প্লেটস আবিষ্কার করেন এবং সেটির সাহায্যে তিনি একটি মজবুত নেগেটিভ ফটো ফিল্ম বানিয়ে ফেলেন এরপর তিনি ১৮৮৯ সালে কোডাক নামে একটি ক্যামেরা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেন। যেটি ছিল পৃথিবীর প্রথম ক্যামেরা কোম্পানি। কোডাক কোম্পানি ১৯০০ সালের Brownie নামক একটি মডেলের ক্যামেরা বের করে যা ১৭০ টি ফিল্ম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। আর এটি ছিল সেসময়ের সব থেকে কমদামি ক্যামেরা 📷 তখন এটির দাম ছিল মাত্র 1$ এক ডলার যা বর্তমানে ৩১ ডলারের সমান আর এই ক্যামেরাটি সেই সময় সাধারণ ব্যক্তি ও কিনতে পারতো ক্যামেরাটির এত কম দাম হওয়ার আরেকটি কারণ সেটি ছিল মার্কেটে কোটাক কোম্পানির কোন কম্পিরিটার ছিলনা। যার ফলে অতি কম সময়ের মধ্যে কোডাক কোম্পানি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে যায়। তবে যে কথাটি না বললেই নয় সেটি হল এই সময় পর্যন্ত যতগুলো ক্যামেরা মানুষ ব্যবহার করত তার সবগুলোই ছিল সাদা কালো অর্থাৎ ওই ক্যামেরা দিয়ে উঠানো ছবিগুলো শুধুমাত্র সাদা এবং কালো এই দুই রঙেরই হয়ে থাকতো। যে কারণে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি কালারিং ক্যামেরা বানানোর প্রবণতা শুরু হয়।

রঙিন ছবি বা কালারিং ক্যামেরা

যেহেতু ক্যামেরা আবিষ্কারের পর থেকে সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে ছবি তুলতে হতো। তাই কৃত্রিম আলো এবং রঙিন ছবির চাহিদা সকলের মাঝে আসতে লাগলো। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৭ সালে আগস্ট উইজ ব্রাদার অটোক্রমের সাহায্যে একটি কালার ক্যামেরা আবিষ্কার করেন যা দিয়ে তখন কালার ছবি উঠানো যেত এরপর দীর্ঘ সময় পড়ে ১৯৪৮ সালে এডউইন্ট ল্যান্ড নামক একজন আমেরিকান আবিষ্কারক একটি ইনস্ট্যান্ট ক্যামেরা আবিষ্কার করেন যা দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই কোন ছবি তুলে তা বের করা যেত।

ডিজিটাল ক্যামেরা কিভাবে আবিষ্কার হয়

সে সময়ের বিখ্যাত ক্যামেরা কোম্পানি কোডাক এ কর্মরত একজন ইঞ্জিনিয়ার যার নাম ছিল স্টিভেন অ্যাসন তিনি পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন এই ক্যামেরায় কোন রিল বা ফিল্ম লাগানো হতো না এই ক্যামেরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কোন ব্যক্তি বা বস্তুর ছবি ওঠানোর পর সেটাকে একটি মেমোরিতে স্টোরেজ করতে পারতো এরপর যুগের বিবর্তনে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ডিজিটাল ক্যামেরা আপডেট হয়ে আরো উন্নত হয়। একটা সময় ২০০০ সালের দিকে samsung কোম্পানি প্রথম ক্যামেরা সহ মোবাইল মার্কেটে লঞ্চ করে যার মাধ্যমে মোবাইল ক্যামেরার প্রচলন শুরু হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ক্যামেরা আবিষ্কারের বিশাল ইতিহাস থেকে সংক্ষিপ্তভাবে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আশা করি সকলের উপকারে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *